প্রতিজ্ঞা
বৃদ্ধ্যাশ্রমের দিনগুলি মন্দ যাচ্ছেনা রহিমার। প্রত্যেক বৃহষ্পতিবার ছেলে দেখা করতে আসে। প্রকৃতির রুক্ষতা তার শরীরেও দেখা দিয়েছে। প্রকৃতি একটা নির্দিষ্ট সময় পর যৌবন ফিরে পেলেও রহিমা বেগমের সেই সুযোগটা হয়তো আর নেই। এসব নিয়ে এখন আর ভাবেন না তিনি। ভাবেন তার ছেলেকে নিয়ে, ছেলের সংসার নিয়ে আর ভাবেন পুত্রবধুকে নিয়ে।
মরিয়মকে পছন্দ করা সত্ত্বেও কিছুতেই মুখ ফুটে বলতে পারছেনা রবিন। মরিয়ম সব কিছু বুঝতে পেরেও রবিনের মুখ থেকেই শুনতে চাচ্ছে। কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় দুইজনই উপস্থিত বক্তৃতায় নাম লিখিয়েছে। প্রতিযোগিতার শুরুতেই উপস্থাপক প্রথম বক্তা হিসেবে রবিনকে মঞ্চে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। বাক্স থেকে একটা চিরকুট তুলতে হবে। চিরকুটে যা লেখা থাকবে সে বিষয় নিয়ে বলতে হবে। রবিনের চিরকুটে লেখা ছিল ‘আমি যাকে ভালোবাসি….’। প্রধান অতিথি হিসেবে সামনে বসে আছেন মেয়র মজিবর রহমান, কলেজের প্রিন্সিপাল, শিক্ষকবৃন্দ, অভিভাবক এবং তার সহপাঠীরা। কিন্তু এই মুহুর্তে তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শ্রোতা হচ্ছে মরিয়ম। আজকেই সুযোগ মনের কথাগুলো বলে দেওয়ার। সবাইকে সালাম দিয়ে রবিন শুরু করে-
‘তুমি জানো না মনের কতটা গভীর থেকে আমি তোমাকে অনুভব করি। তুমি আমাকে প্রায়ই সঙ্গ দাও। আমার মন খারাপ থাকলে তোমারও মন খারাপ হয়। জানি তুমি আমাকে বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু ভাবো। আমিও তোমাকে বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবি। আমার মন খারাপ থাকলে তুমি আমার মন ভালো করার চেষ্টা কর। আমি আমার সকল গোপন কথা তোমার সাথে শেয়ার করি। তবে সবচেয়ে বড় গোপনীয়তাটিই এখনও রক্ষিত রয়ে গেছে। মনে আছে ছোটবেলায় আমরা কত খেলাধুলা করেছি? কত মারধোর করেছো তুমি আমাকে। রাগ হয়েছে কিন্তু তোমার মায়ায় গলেও গিয়েছি। আমরা একসাথে কত ঘুরেছি। বাইরে খেতে যাওয়ার সময় কখনও আমাকে বিল দিতে দাও নি তুমি। নিজ হাতে প্রায়ই খাইয়ে দাও তুমি আমাকে। আমি যাকে ভালোবাসি তার শেষ গন্তব্য যাতে বৃদ্ধাশ্রম হতে না হয়। আমাকে যেভাবে তুমি লালন পালন করেছো তোমার বার্ধক্যেও যেন একইভাবে আমি তোমার দেখাশোনা করতে পারি। এত কিছুর পরও তোমাকে কখনও বলা হয়নি ভালোবাসি। আজকে সেই সুযোগটা কিছুতেই হাতছাড়া করতে চাইনা। আজকে সবার সামনে আমি বলতে চাই আমি তোমাকে ভালোবাসি মা! বড্ড বেশিই ভালোবাসি।’