ছোট বেলায় ঈদের আগের দিন
ঈদের আগের দিন মানেই দাদু বাড়ি বা নানু বাড়ি যাওয়া । দাদু বাড়িতে পশ্চিম দিক টা তে ধান খেতের বিশাল মাঠ । সে জন্য চাঁদ দেখার জন্য ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ আমার দাদু বাড়ির পশ্চিম দিকটা তে এসে জড়ো হতো । শেষ রোজার ইফতারে দাদু বাড়িতে আমার অন্যান চাচা এবং চাচাতো ভাই বোন আসতো । ইফতারের পর সবাই মিলে চাঁদ দেখতে বের হতাম। দাদুকেও নিয়ে যেতাম। যতটুকি দূরে যাওয়া যায় যেতাম। চাঁদ দেখার পর আমাদের যে একটা আনন্দ লাগতো তা আমাদের নাচানাচি এবং দৌড়াদৌড়ি তে প্রকাশ পেত। দাদু সবসময় চাঁদ দেখে দোয়া পড়তেন। আমারাও সাথে দোয়া পড়তাম। বড়রা চলে গেলে আমরা বাড়ির পেছনে লুকোচুড়ি আর ছোয়াছোয়ি খেলতাম। একটু পড় ই নাকে নতুন পিঠার গ্রাণ আসতো আর দৌড়ে চলে যেতাম আসে পাশের বাড়ি গুলিতে। প্রত্যকের বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের পিঠা খাওয়া, খেলাধুলা, গল্প এভাবে রাতের খাবারের সময় চলে আসতো। ঈদের আগের দিন রাতে সবাই একসাথে বসে খাওয়ার একটা আলাদা মজা। সবার মনে এক অন্য রকম আনন্দ বিরাজ করতো। খাওয়ার পর ভাইবোন রা মিলে আড্ডা দিতাম, কার কার কাছে সালামী চাবো, কখন চাবো মোটামুটি একটা লিস্ট করে ফেলতাম। এর মাঝে বাড়িতে কালকের স্পেশাল রান্নার জন্য পেয়াজ কাটা, মসল বাটা, পিঠা বানানোর কাজে আম্মু আর চাচীরা ব্যস্ত। মাঝে মধ্যে কিছু একটা আনার জন্য বড় ভাইদের এলাকার বাজারে পাঠানো হতো।সেখান থেকে বড় ভাইরা আমাদের জন্য চকলেট আর মিষ্টি আনতে কখনো ভুলতেন না। এই স্মৃতি গুলো তখনকার যখন গ্রামে বিদ্যুৎ ছিলো না। হ্যজাক লাইট আর হারিকেন এর আলো ছাড়া, আলোর তেমন উৎস্য ছিলো না। এজন্য ভূতের গল্প সেই রাতে জমতো অনেক। আস্তে আস্তে ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে একেক জন এক জায়গায় ঘুমিয়ে পড়তাম বাড়ির ভেতরে। এভাবেই ঈদের আগের দিন রাত কাটতো দাদু বাড়িতে।